নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ দীর্ঘ তিন বছর ধরে ক্যানসারে আক্রান্ত রিনা বেগম। বরিশালে দুরারোগ্য এই ব্যাধির যথাযথ চিকিৎসা না থাকায় এ পর্যন্ত আটবারের বেশি ঢাকা যাওয়া-আসা করেছেন। নিয়েছেন রেডিওথেরাপিও। এভাবে বরিশাল থেকে ঢাকায় গিয়ে চিকিৎসার পেছনে ইতিমধ্যে তার কয়েক লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। রিনা বেগমের স্বামী পেশায় ইলেকট্রিশিয়ান। যা আয় হয় তা দিয়ে সংসার চালাতেই কষ্ট হয় এই দম্পতির। এর মধ্যে আবার ক্যানসারের ব্যয়বহুল চিকিৎসা তাদের জন্য যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে দাঁড়িয়েছে। অর্থের অভাবে বর্তমানে রিনার চিকিৎসা বন্ধ। ক্যানসারের চিকিৎসার টাকা জোগাতে বিত্তবানদের দ্বারে দ্বারেও ধরনা দিয়েছেন। রিনা বেগমের মতো এমন আরও অনেক দরিদ্র ক্যানসার আক্রান্ত রোগী রয়েছেন দক্ষিণাঞ্চলে। যারা কিনা অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না। এমন সব রোগীর স্বজনদের দাবি ছিল বরিশালে যাতে একটি ক্যানসার হাসপাতাল র্নিমাণ করা হয়। যেন কাউকে চিকিৎসার জন্য রাজধানী ঢাকায় ভিড় জমাতে না হয়। সেই প্রতীক্ষার অবসান হতে যাচ্ছে। বরিশালে নির্মিত হচ্ছে স্বতন্ত্র ক্যানসার হাসপাতাল। এরই মধ্যে ১৭ তলা হাসপাতাল ভবন নির্মাণের প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে। এখন অপেক্ষা শুধু প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে নির্মাণকাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের। সেটা চলতি মাসের মধ্যেই হতে পারে বলে জানিয়েছে ক্যানসার হাসপাতাল ভবন নির্মাণকাজের বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান গণপূর্ত বিভাগ। জানা গেছে, দক্ষিণাঞ্চলবাসীর চিকিৎসাসেবার সর্বশেষ ভরসা শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতাল। যুগে যুগে এ হাসপাতালে চিকিৎসাসেবার আমূল পরিবর্তন ঘটলেও নেই ক্যানসারের চিকিৎসার যথাযথ ব্যবস্থা। নামেমাত্র একটি ক্যানসার ইউনিট থাকলেও নেই পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি আর জনবল। তাই বর্তমানে রেডিওথেরাপি নির্ভর হয়ে আছে ক্যানসার ইউনিটটি। ফলে এ অঞ্চলের মানুষকে ক্যানসারের চিকিৎসার জন্য ছুটতে হচ্ছে রাজধানী ঢাকায়। এতে ব্যয় যেমন বাড়ছে তেমনি ভোগান্তিও পোহাতে হচ্ছে পদে পদে।
হাসপাতালের ক্যানসার বিভাগ থেকে পাওয়া তথ্যমতে, ২০০২ সালে ক্যানসার রোগীদের থেরাপি দেওয়ার জন্য ১০ কোটি টাকা দামের একটি কোভাল্ট-৬০ মেশিন স্থাপন করা হয়। ১৩ বছরের মাথায় অর্থাৎ ২০১৫ সালের ২৯ নভেম্বর সেটি অচল হয়ে পড়ে। এটি সচল থাকাবস্থায় প্রতিদিন গড়ে ৩০০ রোগীর থেরাপি দেওয়া হতো। শুধু বরিশাল অঞ্চলই নয়, খুলনা এমনকি ঢাকা থেকেও ক্যানসার আক্রান্ত রোগীরা এখানে আসতেন থেরাপি নেওয়ার জন্য। এছাড়া নারীদের জরায়ু ক্যানসার চিকিৎসায় স্থাপিত মেশিনটিও অকেজো হয়ে পড়ে আছে। অন্যদিকে রেডিওলজি মেশিন নেই, রেডিও টেলিথেরাপি নষ্ট, ব্রাকি থেরাপি যন্ত্রও অচল। তিন বছর আগে ক্যানসার রোগীদের জন্য কোটি টাকা ব্যয়ে হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় স্থাপন করা হয়েছিল ব্রাকি থেরাপি মেশিনটি। কিন্তু ঠিকাদার মেশিনটি সচল অবস্থায় র্কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে না দেওয়ায় সেটি ওই অবস্থাতেই পড়ে আছে। এমন পরিস্থিতিতে শেবাচিম হাসপাতালে ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা এখন রেডিওথেরাপি আর ওষুধনির্ভর হয়ে পড়েছে।
গণপূর্ত বিভাগের বরিশাল মেডিকেল কলেজের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. কামাল হোসেন হাওলাদার জানান, শেবাচিম হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণি স্টাফ কোয়ার্টারের পাশে পরিত্যক্ত ডোবায় নির্মাণ হচ্ছে ১৭ তলা ভবনের ক্যানসার হাসপাতালটি। ভবন নির্মাণের জন্য এরই মধ্যে দরপত্রের মাধ্যমে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করা হয়েছে। দরপত্র অনুযায়ী ভবনের নির্মাণব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৯৪ কোটি টাকা। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে প্রাথমিক কিছু কাজ শুরু করেছে। হাসপাতাল নির্মাণের জন্য নির্ধারিত ডোবাটি বালু ফেলে ভরাটের পর তৃতীয় দফায় সয়েল টেস্ট চলছে। পাইলিংয়ের পর আরও এক দফা সয়েল টেস্ট করা হবে। এ বিষয়ে গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জেরাল্ড অলিভার গুডা বলেন, ‘গত মাসের শেষদিকে প্রধানমন্ত্রী হাসপাতাল ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করবেন বলে কথা ছিল। কিন্তু করোনার কারণে সেটা আর হয়নি। আশা করা যাচ্ছে চলতি মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী ক্যানসার হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করবেন।’
Leave a Reply